আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পানির নিচে ফতুল্লা

তুষার আহমেদ :
শঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। সময়ের কাঁটা ঘুরে তা কেবল বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বর্ষা না আসতেই ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে গতকালের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ন ও ঘণবসতিপূর্ন জনপদ ফতুল্লা। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেনগুলোও তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ডিএনডি এলাকাসহ ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। এতে আবারও দূর্ভোগে পড়েছেন ফতুল্লার লাখো মানুষ।
জানা গেছে, প্রতিবছরই বর্ষার আগমনে তলিয়ে যায় শিল্পকারখানা অধ্যুষিত অঞ্চল ফতুল্লার বিভিন্ন অঞ্চল। এবার বর্ষার আগেই ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে গতকালের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সেই ধারাবাহিকতা থেকেই গেল।
মাঝে শুষ্ক মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনের মোক্ষম সময় গেলেও ওই সময়টাতে তোড়জোড় দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ এখনো সুগম হয়নি। ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় খালগুলো উদ্ধার ও খনন করা হলেও অভ্যন্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় ড্রেনগুলোতে পানি নামছে না। এতে খাল পর্যন্ত পানি যাচ্ছে না। ফলে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও ফতুল্লা সহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রেহায় পাচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে গত রবিবার গভীর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। বিরামহীন এই বৃষ্টিতে ফতুল্লার লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, ইসদাইর, গাবতলা, টাগারপাড়, দাপা ইদ্রাকপুর, কুতুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিন সেহাচর, পিলকুনী, নন্দলালপুর সহ প্রায় প্রতিটি জনপদ, কাশিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর, আমতলা, সহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথায় হাঁটু আবার কোথায় জমেছে কোমড় পানি। কোথাও কোথাও বাড়ির নিচতলার রান্না ঘর ও সৌচাগার পানিতে তলিয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, এসব এলাকার অভ্যান্তরিন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ড্রেনগুলো বালু, মাটি, পলিথিন ও অপচনশীল বর্জ্যে আটকে গেছে। একই ভাবে গত বছর খনন করা অভ্যান্তরিন খালগুলোও অনেকটা ভরাট হয়ে আছে গৃহস্থালির আবর্জনায়। এতে বৃষ্টির পানি খাল বা ড্রেন হয়ে নামতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরের মত জলাবদ্ধতা থাকছেই।
এদিকে, বর্ষা শুরুর আগেই মাত্র একদিনের টানা বৃষ্টিতে ফতুল্লার এমন পরিণতি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কপালে পড়েছে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ। তারা বলছেন, একদিনের বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলে আগামী দিনগুলোতে এবং ভরা বর্ষায় জলজটের এই মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই।
এই বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি ইস্তেহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় বা প্রতিশ্রুতি হলো জলাবদ্ধতা দূরকরণে কাজ করা। আমি নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের আগেই ফতুল্লার লালপুর ও ইসদাইর সহ বিভিন্ন এলাকার খাল ও ড্রেনগুলো পরিদর্শন করেছি। অনেক জায়গায় কাজও ধরা হয়েছে। আসলে ড্রেনগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। সরকার মানুষের উপকারের জন্য ড্রেন করে দিয়েছে কিন্তু মানুষ সচেতন না হয়ে এই ড্রেনগুলোকে ময়লা আবর্জনা ফেলে আটকে রেখেছে। আবার কোথায় কোথাও ড্রেনের অস্তিত্বও রক্ষা করেনি। প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে সরকার ড্রেন ও রাস্তা করে দিবে ঠিকই কিন্তু মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রেহায় পাবে না।’
তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান সাহেব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যেই ডিএনডি প্রজেক্টের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।’
জানা গেছে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশার বাণী শুনিয়ে যান। তারা বরাবরই বলছেন, সামনের বর্ষা মৌসুমে থাকবে না জলাবদ্ধতা, ডুববে না পাড়া মহল্লা ও রাস্তা ঘাট। তবে, বর্ষাকাল যখনই শুরু হয়, তখনই ডুবতে শুরু করে ডিএনডি এলাকার পাড়া মহল্লার প্রতিটি অলিগলি। তখন জনপ্রতিনিধিদেরও আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
বছর দুই আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এলজিইডির ১৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন ফান্ডের উপর ভরসা করে বলেছিলেন, ওই অর্থ দ্বারা ফতুল্লার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে আজও এর বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজে হাত দেয়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে জলাবদ্ধতার ভোগান্তির শিকার শত শত নারী-পুরুষ কুতুবপুরে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছিল। এর মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল কুতুবপুরবাসী। এবারও কুতুবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে সেই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।